চট্টগ্রাম জেলার রাঙ্গুনিয়ায় বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে অগ্নিকাণ্ডে এক পরিবারের পাঁচজনের প্রাণহানির ঘটনাটি মর্মান্তিক। ধারণা করা হচ্ছে, চুলা থেকে এ অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়েছে। পরিবারটির বেঁচে থাকা একমাত্র সদস্য এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
জানা যায়, আগুনের তীব্রতা ও ধোঁয়া এত বেশি ছিল যে, আশপাশের মানুষের পক্ষে আগুন নেভানো বা আটকে পড়াদের উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। খবর পেয়ে রাঙ্গুনিয়া ফায়ার স্টেশনের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করে। এ সময় জানালার গ্রিল কেটে পাঁচজনের লাশ উদ্ধার করা হয়। অগ্নিদগ্ধ ব্যক্তিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়।
উদ্বেগজনক হলো, এত আলোচনার পরও দেশে অগ্নিকাণ্ডজনিত দুর্ঘটনা কমছে না। এ কারণে আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি ঘটছে প্রাণহানি। দেশে একের পর এক অগ্নিকাণ্ডের পরও ভবন মালিকসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোর টনক নড়ছে না। গত দেড় দশকে অগ্নিকাণ্ডে বহু মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে; আহত হয়েছেন অগণিত মানুষ। অগ্নিনির্বাপণের যথোপযুক্ত ব্যবস্থা তথা আধুনিক প্রযুক্তির অভাবে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাগুলো ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বস্তুত কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণেই অগ্নিকাণ্ডে হতাহতের সংখ্যা বাড়ে। সবাইকে মনে রাখতে হবে, সামান্য অবহেলার কারণে সূত্রপাত হতে পারে মর্মান্তিক ঘটনার। তাই সবাইকে এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।
নগরায়ণের ফলে দেশে সুদৃশ্য ভবনের সংখ্যা বাড়লেও সেগুলো কতটা নিরাপদ, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। একেকটি অগ্নিকাণ্ডের পরই বেরিয়ে আসে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অবহেলার খবর। ভবনের নির্মাণত্রুটি এবং কর্তৃপক্ষের দায়িত্বহীনতা-এসব তথ্য দুর্ঘটনার আগে যাতে জানা যায়, সেজন্য নিতে হবে কার্যকর পদক্ষেপ। যাদের অবহেলার কারণে অগ্নিকাণ্ড ঘটে, তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।
অগ্নিকাণ্ড নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে অন্যতম সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় পর্যাপ্ত পানিপ্রাপ্তি। সারা দেশেই জলাধারের পরিমাণ কমে গেছে। ফলে কোনো অগ্নিকাণ্ড ঘটলে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে দেরি হয়। দেশে বহুতল ভবন, বিশেষত আকাশছোঁয়া ভবনের সংখ্যা বাড়লেও অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার আধুনিকায়নে কাক্সিক্ষত পরিবর্তন আসেনি। যে কোনো শিল্পকারখানায় অগ্নিনির্বাপণের পর্যাপ্ত সুবিধা থাকা বাধ্যতামূলক। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই ভবন নির্মাণে এসব বিষয় যথাযথ গুরুত্ব পায় না। বিষয়টি উদ্বেগজনক। বস্তুত এসব কারণেই দেশে কিছুদিন পরপর অগ্নিকাণ্ডে প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। পুরান ঢাকার নিমতলীর ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড, চকবাজারের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডসহ বিভিন্ন অগ্নিকাণ্ডের পরও কর্তৃপক্ষের টনক নড়েনি। অগ্নিনির্বাপণের সামগ্রিক কর্মকাণ্ডে গতি আনতে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া না হলে অগ্নিকাণ্ডে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা থেকেই যায়। ২০১০ সালে নিমতলীর ঘটনার পর দেশে আরও বহু বড় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। প্রতিটি ট্র্যাজেডির পর অগ্নিকাণ্ডে ক্ষয়ক্ষতি ন্যূনতম পর্যায়ে রাখতে করণীয় নিয়ে বহু আলোচনা হলেও বিশেষজ্ঞদের সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। মানুষের জীবনের নিরাপত্তার জন্য অবিলম্বে বিশেষজ্ঞদের সুপারিশগুলো কার্যকর করা দরকার। অগ্নিকাণ্ডে প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে সব দুর্ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত, দায়ীদের বিচারের আওতায় আনা, বিল্ডিং কোড অনুসরণ এবং আবাসিক এলাকার পূর্ণাঙ্গ আবাসিক মান নিশ্চিত করতে হবে যে কোনো উপায়ে।